রিও অলিম্পিক ২০১৬ ও বাংলাদেশ (Rio Olympic 2016)


 রিও অলিম্পিক ২০১৬
(Olympic 2016)
Rio De Janeiro, Brazil

অলিম্পিকের ইতিহাস
প্রাচীন লিপি থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে, অলিম্পিকের সূচনা ঘটেছিল খৃষ্টপূর্ব ৭৭৬ সালের দিকে। এই প্রাচীন লিপিতে চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত দৌড় প্রতিযোগীতায় বিজয়ীদের নাম লিপিবদ্ধ ছিল।
প্রাচীন গ্রীসে দেবতা জিউসের আবাসস্থল অলিম্পিয়ায় ধর্মীয় রীতি-রেওয়াজের সাথে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হত। মূলত প্রাচীন গ্রিক নগর রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরাই এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করত। সাধারন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছাড়াও এই অনুষ্ঠানে মল্লযুদ্ধ, ঘোড়াদৌড়, রথ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হত। প্রাচীন বিভিন্ন লেখা থেকে জানা যায় যে, বিভিন্ন নগর রাষ্ট্রের মধ্যে দন্দ্ব বা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করলেও এই প্রতিযোগিতা চলাকালীন সময়ে তা স্থগিত থাকত। মূলত অলিম্পিক ছিল ধর্মীয় আচার ও রীতি অনুযায়ী জিউস এবং অলিম্পিয়ার রাজা এবং পৌরানিক বীর পিলোপ্সকে সম্মান প্রদর্শনের একটি ঐতিহ্যগত ক্রীড়া অনুষ্ঠান। রাজা পিলোপ্স ওয়িনৌসের সাথে রথ প্রতিযোগিতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। অলিম্পিকে বিজয়ীরা সম্মানে ভূষিত হতেন।

 খৃষ্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দিতে প্রাচীন গ্রীসের অলিম্পিয়া থেকে শুরু হ্ওয়া প্রাচীন অলিম্পিক গেমস থেকেই মূলত আধুনিক অলিম্পিক গেমসের ধারণা জন্মে। আধুনিক অলিম্পিক বলতে ১৭শ শতাব্দীর দিকে শুরু হ্ওয়া ক্রীড়া প্রতিযোগিতাকে বুঝানো হয়। ১৮৫০ সালের দিকে ইংল্যান্ডের শ্রপশায়ারের মাক ওয়েনলকে আধুনিক যুগের মত করে অলিম্পিক গেমসের প্রচলন শুরু করেন ডঃ উইলিয়াম পেনি ব্রুকস। ডঃ ব্রুকস এই গেমের নাম দেন ওয়েনলক অলিম্পিয়ান গেমস। এই ক্রিড়াযজ্ঞটিই ধারাবাহিকভাবে আজ পর্যন্ত চলে আসছে। ডঃ ব্রুকস এই গেমের জন্য ১৮৬০ সালের ১৫ নভেম্বর ওয়েনলক অলিম্পিয়ান সোসাইটির প্রতিষ্ঠা করেন।

১৮৯০ সালের ওয়েনলক অলিম্পিয়ান সোসাইটির অলিম্পিয়ান গেমস দেখে ব্যারন পিয়ের দ্যা কুবেরত্যাঁ আন্তর্জাতিক অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠার অনুপেরণা পান। ১৮৯৪ সালে “ব্যারন পিয়ের দ্যা কুবেরত্যাঁ” সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) গঠন করেন। এর সদর দপ্তর ছিল সুইজারল্যান্ডের লুসানে এবং সদস্য সংখ্যা ছিল ১৪ জন। ১৮৯৪ থেকে ১৯২৫ সাল পর্যনÍ পিয়ের দ্যা কুবেরত্যাঁ আইওসির সভাপতি ছিলেন। অলিম্পিক গেমসের যাবতীয় দায়িত্ব আইওসির উপর ন্যস্ত থাকে। বিংশ এবং একবিংশ শতাব্দিতে অলিম্পিক গেমসে অনেক পরিবর্তন আসে যেমন, শীতকালীন অলিম্পিকের প্রচলন, প্রতিবন্ধীদের জন্য প্যারালিম্পিক এবং কিশোর ক্রীড়াবিদদের জন্য যুব অলিম্পিক গেমস। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ(১৯১৪-১৯১৮) এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫) সময় এই প্রতিযোগিতা বন্ধ ছিল এবং ¯œায়ুযুদ্ধের সময় এই প্রতিযোগিতা সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়।

১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী ক্রীড়াবিদদের জন্য সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ২০১০ সালে মূল অলিম্পিক গেমসের সাথে যুব অলিম্পিক গেমসের সংযোজন করা হয়েছিল। এর প্রধান রূপকার ছিলেন আইওসির প্রেসিডেন্ট জ্যাকুয়াস রোগ। তিনি এই যুব অলিম্পিকের প্রস্তাব করেন ২০০১ সালে যা আইওসির ১১৯ তম কংগ্রেসে অনুমোদিত হয। ২০১০ সালের ১৪-২৬ আগস্টে সিঙ্গাপুরে প্রথম গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয়, অপরদিকে এর শীতকালীন আসর বসে দুই বছর পর অস্ট্রিয়ার ইন্সব্রুকে। এই যুব অলিম্পিক গেমস অলিম্পিকের মূল আসরের চেয়ে স্বল্প পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়। মূল অলিম্পিকের ন্যায় যুব অলিম্পিকেও বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থাকলেও এর স্থায়িত্ব কমানোর জন্য কিছু ইভেন্ট বাদ দেওয়া হয় এবং কিছু খেলায় নারী ও পুরুষের মিশ্র দল গঠন করা হয়।

অলিম্পিকে ৩৫টি ক্রীড়া, ৩০টি শাখা ও প্রায় ৪০০টি বিভাগে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে গ্রীষ্মকালনি অলিম্পিকে ২৬টি ক্রীড়া এবং শীতকালীন অলিম্পিকে ১৫টি ক্রীড়ার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি অলিম্পিক ক্রীড়ার আইওসি স্বীকৃত আন্তর্জাতিক নিয়ামক সংস্থা আছে। আইওসিতে এমন ৩৫টি ক্রীড়া সংস্থা প্রতিনিধিত্ব করছে।

আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি কায়েকটি অঙ্গ সংগঠনের মাধ্যমে কাজ করে থাকে। সংগঠনগুলো হলো- আন্তর্জাতিক ফেডারেশনসূমহ, জাতীয় অলিম্পিক কমিটি এবং আয়োজক কমিটি। আইওসির দাফতরিক ভাষা হলো ফরাসি ও ইংরেজি। যদি আয়োজক দেশের ভাষা ফরাসি বা ইংরেজি না হয় তাহলে অলিম্পিকের আয়োজনে সেই ভাষাও ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ প্রত্যেকটি ঘোষণা ইংরেজি, ফরাসি ও স্থানীয় এই তিনটি ভাষায় দেয়া হয়।
অলিম্পিক ২০১৬
গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ২০১৬ একটি আন্তর্জাতিক বহুক্রীড়া প্রতিযোগিতা, যা ৩১তম অলিম্পিয়াড় গেমস এবং রিও ২০১৬ নামে পরিচিত। অলিম্পিক গেমস আয়োজনের দায়িত্ব দেয়া হয় কোন শহরকে, দেশকে নয়। যেমন এবারের গেমস আয়োজন করছে রিও ডি জেনেরিও; ব্রাজিল নয়। অথচ বিশ্বকাপ ফুটবল কিংবা ক্রিকেট ইত্যাদি আয়োজনের দায়িত্ব পায় দেশ। ব্রাজিলের রিও দি জেনেরিও শহরে ৫ই আগষ্ট, ২০১৬ থেকে ২১ই আগষ্ট, ২০১৬ পর্য়ন্ত অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতা সমূহ আয়োজক শহর রিও দি জেনেরিওর ৩৩টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয়। রিও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের প্রথম অলিম্পিক প্রতিযোগিতার আয়োজক শহর এবং ল্যাটিন আমেরিকায় দ্বিতীয়। ১৯৬৮ সালে ল্যাটিন আমেরিকার মেক্সিকো সিটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছি অলিম্পিক প্রতিযোগিতা। এবারের অলিম্পিক আলোচনা সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ব্রাজিলের অর্থনৈতিক মন্দা। কিন্তু সন্ত্রাসী হামলা ও জিকা ভাইরাসের আতঙ্কের কারণে অনেক ক্রীড়াবিদ প্রতিযোগিতা থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়। রিও ২০১৬ দিয়েই যুক্তরাষ্ট্র ১০০০ পদকের মাইলফলক স্পর্শ করেন।

সাঁতারে বরাবরের এবারও পুলের রাজা ছিলেন মাইকেল ফেলপস। নিজের শেষ অলিম্পিকে পাঁচটি স্বর্ণ জয়ের গর্বে হাসেন আমেরিকান কিংবদন্তি। এক ইভেন্টে টানা চারটি স্বর্ণজয়ের অনন্য ইতিহাস লেখেন তিনি। নারীদের ইভেন্টে বিশ্ব পায় নতুন দ্রুততম মানবী পেনিল ব্লুমকে। চমক দেখালেন ‘লৌহমানবী’ কাতিনকা হোসজু। চারটি স্বর্ণসহ পাঁচটি পদক জিতে আগামী দিনে কিংবদন্তি হওয়ার ইঙ্গিত দেন আমেরিকান টিনএজার কেটি লেডেকি। রিও ডি জেনেইরেতে ৩২টি ইভেন্টে অলিম্পিক সাঁতার নতুন করে লিখে অনেকগুলো ইতিহাস।

জিমন্যাস্টিক্সের ২০ বছরের ইতিহাসে প্রথম অ্যাথলেট হিসেবে একই সঙ্গে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ও অলিম্পিকে মেয়েদের অল-অ্যারাউন্ডে স্বর্ণ জিতে নেন আমেরিকার সিমোন বাইলস। এককে আরো দুইটি ও দলগত একটি স্বর্ণসহ মোট চারটি স্বর্ণ জিতেছেন এই ১৯ বছর বয়সী। ট্রাম্পোলিন জিমন্যাস্টিক্সের মেয়েদের ব্যক্তিগত ইভেন্টের সেরা কানাডার রোজি ম্যাক্লেন্যান। প্রথম অ্যাথলেট হিসেবে ট্রাম্পোলিন জিমন্যাস্টিক্সে টানা দুই আসরে স্বর্ণ জয়ের কীর্তি গড়েন। হরিজন্টাল বারে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে বিজয় গর্বে হাসেন জার্মানির ফাবিয়ান হামবুশেন। প্যারালাল বারে সেরা হয়েছেন ইউক্রেনের ওলেগ ভারনিয়াভ। ব্যালেন্স বিমে সেরা হয়ে প্রথম ডাচ নারী হিসেবে অলিম্পিক জিমন্যাস্টিক্সে স্বর্ণ জেতেন সানে ভেভার্স। ইউক্রেনের ওলেগ ভারনিয়াভের সঙ্গে জমজমাট দ্বৈরথ শেষে জিমন্যাস্টিক্সের অল অ্যারাউন্ড ইভেন্টে সোনা জিতেছেন জাপানের কোহেই উচিমুরা। গত ৪৪ বছরে এই প্রথম কোনো জিমন্যাস্ট টানা দুই অলিম্পিকে ব্যক্তিগত অল অ্যারাউন্ড ইভেন্টের সোনা জিতলেন।

উসাইন বোল্টের ‘ট্রিপল-ট্রিপল’, মো ফারাহর ‘ডাবল ডাবল’, প্রথম নারী অ্যাথলেট হিসেবে অ্যালিসন ফেলিক্সের ছয়টি স্বর্ণ জয়, আলমাজ আয়ানার ১০ হাজার মিটারের বিশ্ব রেকর্ড ভাঙা, অ্যালাইন থম্পসনের ডাবল জয় এমন সব অসাধারণ গল্পের জন্ম দিয়েছে রিও অলিম্পিকের ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড। স্প্রিন্টে দাপট ছিল জ্যামাইকার, দূরপাল্লায় কেনিয়ার। সব মিলিয়ে বরাবরের মতোই আধিপত্য ছিল আমেরিকানদের।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানঃ

রিও দি জেনেরিওর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিল না ২০০৮ সালের বেইজিং আর ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকের মতো আধুনিক প্রযুক্তির ছড়াছড়ি। ব্যয়বহুল প্রযুক্তি কম ব্যবহার করে আয়োজকরা ভরসা করেছেন ব্রাজিলের মেধাবী শিল্পী আর কার্নিভাল সংস্কৃতির উপর। ৫ আগস্ট, ২০১৬ ব্রাজিলের রিও দি জেনেরিও শহরে মারকানা স্টেডিয়ামে ৭০ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে মশাল জ্বালিয়ে রিও অলিম্পিকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ব্রাজিলের সাবেক ম্যারাথন দৌড়বিদ ও ২০০৪ অলিম্পিকে ব্রোঞ্জজয়ী “ভান্ডারলেই ডি লিমা”। স্টেডিয়ামে মার্চ পাস্টে নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরেন অংশগ্রহণকারী দেশগুলো। তুলে ধরা হয় প্রায় পাঁচ শতাব্দী আগে পর্তুগিজরা পা রাখার পর থেকে ব্রাজিলের পথচলা। উদযাপন করা হয় দেশটির ইতিহাস আর প্রাকৃতিক সৌন্দয্যে। ব্রাজিলের নিজস্ব সংস্কৃতি ও আতশবাজির জমকালো আলোর মাধ্যমে উদ্বোধনী সম্পন্ন হয়। উপস্থিত দর্শকদের জন্য আকর্ষনীয় বিষয় ছিল আতশবাজি। এক হিসেবে দেখা যায় ব্রাজিলের ৯০% জনগণ অলিম্পিক খেলা দেখেছে। প্রথমবারের মতো অলম্পিকে অংশগ্রহণ করে ফিজি, জর্ডান ১টি করে স্বর্ণ পদক জিতেছে। এবার রিও অলিম্পিকে বিশ্ব রের্কড হয়েছে ২৭টি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশঃ
রিও ২০১৬ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে মশাল প্রজ্বলন করে ২০০ মিটার ঁেহটে গেলেন বাংলাদেশের শ্রেষ্ট অর্থনীতিবিদ, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী কীর্তিমান ব্যক্তি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবং মার্চ পাস্টে জাতীয় পতাকা বহন করেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান ও তার পিছনে পুরো বংলাদেশ দল। যা বাংলাদেশের সম্মানকে আরো বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে।
রেকর্ড সমূহঃ
রিও ২০১৬ অলিম্পিকে ব্যক্তিগত শীর্ষ সোনা জয়ী যুক্তরাষ্টের জলদানব মাইকেল ফেলপস। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে ১৮ টি সোনা সহ মোট ২২টি পদক নিয়ে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। পুলে ঝড় তোলা এই সাঁতারু এমনিতেই ছিলেন অলিম্পিকের কিংবদন্তি, তব্ওু যেন অপূর্ণতা ছিল তার মনে। এই অপূর্ণতা থেকেই আমেরিকার অলিম্পিক কমিটির ট্রায়ালে পরীক্ষা দিয়েই এসেছিলেন র্ওি ২০১৬ তে। অলিম্পিকে ফিরেই সেই পুরনো ফেলপস পদকের পর পদক জিতে নিজেকে আরো ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেলেন এই আমেরিকান সাঁতারু। ২০০ মিটার মিডলে, ৪ গুনিতক ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে, ৪ গুনিতক ১০০ মিটার মিডলে, ২০০ মিটার বাটারফ্লাই ্ও ৪ গুনিতক ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে ৫টি সোনা জিতে সোনার সংখ্যা নিয়ে গেলেন ২৩ এ। সব মিলিয়ে তার পদক সংখ্যা এখন ২৮টি। উল্লেখ্য, তিনি সপ্তাহে ৬ দিন ৬ ঘন্টা করে সাঁতরান। সব মিলিয়ে সপ্তাহে ৮০ কিলোমিটার সাঁতরান। এছাড়া সপ্তাহে তিনদিন ২ ঘন্টা করে শারীরিক কসরত করেন।র্ওি অলিম্পিকে শীর্ষ আলোচিত ক্রীড়াবিদ জ্যামাইকার দ্রুতমানব উসাইন বোল্ট। অলিম্পিকে নামার আগে চোটের কারণে সংশয়ে ছিলো যে সেরাটা দিতে পারবে কিনা। কিন্তু ট্র্যাকে নেমেই ঝড় তোলেন এবং সেরাটা করে দেখালেন। তিনি ট্রিপল সোনা জয় করেন। ৯.৮০ সেকেন্ড সময় নিয়ে ১০০ মিটার,  ১৯.৭০ সেকেন্ড সময় নিয়ে ২০০ মিটার এবং ৪ গুনিতক ১০০ মিটার রিলেতে সোনা জিতে পূরণ করেন “ট্রিপল ট্রিপল”। এই নিয়ে তার মোট সোনা সংখ্যা ৯টি। এবার তারই কন্ঠে ধ্বনিত হয় “আই অ্যাম দ্যা গ্রেটেস্ট”।রিও অলিম্পিকে যুক্তরাষ্ট অলিম্পিক দলকে নেতৃত্বদানকারী ১৯ বছর বয়সী সিমোনে বাইলস। অলিম্পিকে এবার প্রথম খেলতে এসেই চমক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। ১৯৮৬ সালের পরে অভিষেক অলিম্পিকে ৪টি সোনা জেতে রেকর্ড় গড়েন পঞ্চম মেয়ে অ্যাথলেট সিমোনে বাইলস।রিও অলিম্পিকে আরেক কিংবদন্তি সোমালিয়ার বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ দৌড়বিদ মো ফারাহ। ছেলেদের ৫০০০ ও ১০০০০ মিটার দৌড়ে পদক যেন নিজের বানিয়ে ফেললেন ৩৩ বছর বয়সী এই অ্যাথলেই। রিও ২০১৬ অলিম্পিকে ২৭ মিনিট ৫.১৭ সেকেন্ড সময় নিয়ে ১০০০০ মিটার দৌড়  এবং ১৩ মিনিট ৩.৩০ সেকেন্ড সময় নিয়ে সোনার পদক গলায় জড়ান মো ফারাহ। উল্লেখ্য, প্রতিদিন সকালে ১৫-১৯ কিলোমিটার দৌড়ান এবং দুপুরে এক ঘন্টা ব্যায়াম করে বিকালে আবারো ৬ কিলোমিটার দৌড়ান এই তারকা। এভাবে প্রতি সপ্তাহে ১৩৫ কিলোমিটার বা র্তাও বেশি অনুশীলন করেন মো ফারাহ।রিও ২০১৬ অলিম্পিকে সাতারে দ্বিতীয় সোনা জয়ী যুক্তরাষ্টের সুপারষ্টার সাতারু কেটি লেডেকি। তবে ৮০০ মিটার ফ্রিষ্টাইল ইভেন্টে বিশ্ব রেকর্ড গড়লেন কেটি লেডেকি। অলিম্পিকে ২০০, ৪০০ ও ৮০০ মিটার ফ্রিষ্টাইলে একাধারে স্বর্ন জেতেন তিনি। উল্লেখ্য, সকাল ৫টা থেকে ৬.৩০টা পর্যন্ত করে প্রায় ৬ কিলোমিটার দুরত্ব অতিক্রম করেন। আবার দুপুরে আবার তিন ঘন্টা সাতারে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করেন।

রিও ২০১৬ তে বাংলাদেশ

অলিম্পিক ইতিহাসে ৩১তম আসর হলেও বাংলাদেশের জন্য এটি নবম। বাংলাদেশি ক্রীড়াবিদদের খেলা শুধু বাছাই প্রক্রিয়া পর্যন্ত শেষ হয়ে যায়। ১৯৮৪ সাল থেকে অংশ নেয়া বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা কোনোদিনও অলম্পিকের মূল পর্বে উঠতে পারে নাই। ফলে অলিম্পিকে পদক পাওয়া স্বপ্নই থেকে যায়। বাংলাদেশের খেলোয়াড়ের অলম্পিকে অংশগ্রহণ এবং ক্রীড়াবিদের মার্চ পাস্ট নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। বাংলাদেশের মতো অনেক উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত রাষ্ট্রও অলিম্পিকে অংশ নিয়ে পদক পেয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও অলিম্পিকে কোনো কৃতিত্ব দেখাতে পারে নাই। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বাংলাদেশের ক্রীড়া ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। সাধারণ শিক্ষার মতো শারীরিক শিক্ষা ক্রীড়াকে গুরুত্ব দিতে হবে।
এবারের স্বপ্নের এই ক্রীড়াযজ্ঞে বাংলাদেশ পাঁচটি ডিসিপ্লিনে অংশগ্রহণ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে গলফ, শুটিং, সাঁতার, অ্যাথলেটিকস ও আর্চারি। পাঁচটি ডিসিপ্লিনে এবার সাতজন ক্রীড়াবিদ অংশগ্রহণ করলেও বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা বহন করলেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান, যা ১৬ কোটি বাঙালির জন্য গৌরবের। কেননা, এই পতাকা বহনের মাধ্যমে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের মাথা উঁচু বয়েছে। আর আধুনিক অলিম্পিকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যারন পিয়ের দ্যা কুবেরত্যাঁর মুলমন্ত্র, “অংশগ্রহনই বড় কথা” অলিম্পিকের শাশ্বত চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে র্ওি অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কোন ক্রীড়াবীদ সরাসরি অলিম্পিকে অংশ নিতে পারেনি। এর আটটি আসরে সবাই খেলেছে উয়াইল্ড কার্ড নিয়ে, এখানে নতুন ইতিহাস গড়ে রিও ২০১৬ তে গেলেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান। বাংলাদেশের অলিম্পিক ইতিহাসে প্রথম সরাসরি খেলোয়ার এই গলফার।

গলফার সিদ্দিকুর রহমানঃ

বাংলাদেশের প্রথম অ্যাথলেট হিসেবে সরাসরি অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলেও প্রত্যাশিত ফল পাননি সিদ্দিকুর রহমান। প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শেষ করতে পারেননি প্রথম দিনটি, ৬০ জনের মধ্যে ছিলেন ৫৬তম, দ্বিতীয় রাউন্ডে কিছুটা উন্নতি করে একটা শট কম খেলে ৪৬তম স্থান নিয়ে বিদায় নেন বাংলাদেশের পতাকা বহনকারী এই গলফার।

শ্যামলি রায়ঃ
রিও আলিম্পিকে মেয়েদের আর্চারি ইভেন্টের এলিমেনেশন্স রাউন্ডে ৫৩তম হয়ে বিদায় নিয়েছেন বাংলাদেশের শ্যামলী রায়। মেয়েদের সিঙ্গেল আর্চারিতে প্রথম সেটে লড়াইটা ভালোই করেন তীরন্দাজ শ্যামলী তব্ওু ২৮-২৭ পয়েন্টের ব্যবধানে হারেন, দ্বিতীয় আর তৃতীয় সেটে ম্যাক্সিকান প্রতিদ্বন্দী গ্যাব্রিয়ালের সামনে ৬-০ ব্যবধানে হেরেই বিদায় নিশ্চিত নেন। শ্যামলীর মোট সংগ্রহ ৬০০ পয়েন্ট।

মাহফুজুর রহমানঃ
৫০ মিটার ফ্রিস্টাইলে ২৩.৯২ সেকেন্ড সময় নিয়ে সাঁতারু মাহফুজুর রহমানের জীবনে ইতিহাস গড়েন এবং হিটেই বাদ পড়েন। তার পূর্বের রেকর্ড় ছিল ২৩.৯৩।

শিরিন আক্তারঃ
মেয়েদের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে প্রাক-বাচাই হিটে টাইমিং ১২.৯৯ সেকেন্ডে আট জনের মধ্যে পঞ্চম হয়ে বিদায় নেন বাংলাদেশের দ্রতমানবী শিরিন আক্তার।

সোনিয়া আক্তারঃ
৫০ ফ্রিস্টাইলে নিজের হিটে ২৯.৯৯ সেকেন্ডে তৃতীয় হয়েছেন। তবে বাংলাদেশের এই সাঁতারু যেতে পারেননি সেরা ষোলতে। ৮৮ জনের মধ্যে ৬৯তম হয়ে বিদায় নিয়েছেন সাঁতারু সোনিয়া আক্তার।

মেজবাহ আহমেদঃ

রিও অলিম্পিকে ১০০ মিটার স্প্রিন্টের হিটে আট জনের মধ্যে চতুর্থ হয়েছেন বাংলাদেশের দ্রুততম মানব মেজবাহ আহমেদ। দুই নম্বর হিটে দৌড়াতে নামা ছেলেদের ১০০ মিটারে প্রাক-বাছাই হিটে মেজবাহর টাইমিং ছিল ১১.৩৪। মেজবাহ নিজের হিটে চতুর্থ হলেও ২৪ জনের প্রাক-বাছাই হিট থেকে ৮জন উঠেছেন মূল হিটে। সব মিলিয়ে ২৪ জনে ১৪তম মেজবাহ।

আবদুল্লাহ হেল বাকিঃ
১০ মিটার এয়ার রাইফেলে একজন শূটার দাঁড়িয়ে ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের মধ্যে ১০টি করে একটি সিরিজের মোট ছয়টি সিরিজ (৬০টি গুলি) শূটিং করতে পারেন। বাকী তার প্রথম সিরিজে ১০৩.৮, দ্বিতীয়টি ১০৪.০, তৃতীয়টি ১০৫.৪, চতুর্থটিতে ১০৩.৬, পঞ্চমটিতে ১০০.৬ এবং ষষ্ঠ ও সর্বশেষটিতে ১০৩.৮ স্কোর করেন, সর্বমোট স্কোর ৬২১.২। কিন্তু ৬২৮ স্কোর গড়তে পারলে শীর্ষ আটে জায়গা করে নিতে পারতেন। উল্লেখ্য, বাকীই হচ্ছেন রিও অলিম্পিকে বাংলাদেশী প্রথম ক্রীড়াবিদ, যিনি পদকের লড়াই থেকে ছিটকে গেলেন।

আলোচিত ঘটনাবলী
    মেয়েদের ১০০ মিটার ফাইনালে টাচ লাইনের কাছে এস ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বর্ণ জিতে আলোচনার ঝড় তোলেন বাহমিয়ান নারী অ্যাথলেট শাউনি মিলার।
    সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সাঁতারু মাইকেল ফেলপসও যে হারতে পারেন, সেটা দেখা গেল এবার। সাঁতারের  ১০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে ফেলপসকে হারিয়ে দেন তারই ভক্ত সিঙ্গাপুরের ২১ বছরের জোসেফ স্কুলিং।
    জাতিগত ভেদাভেদেও কারণে ইসরায়েলি এক জুডো খেলোয়াড়ের সঙ্গে ম্যাচ শেষে করমর্দন না করে বের হয়ে যান মিশরের এক জুডো খেলোয়াড়।
    উসাইন বোল্ট ১০০ মিটার জিতেই ঘোষণাটা দিয়ে রেখেছিলেন। ৪*১০০ মিটার জিতেই ট্রিপল-ট্রিপলের সেই ঘোষণা বাস্তবায়ন করেন বোল্ট। ইতিহাসে অমরত্ব থাকার মতো রসদ জোগাড় হয়ে যায় এই জামাইকানের।
    প্রথম টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে অ্যান্ডি মাওে জিতেছেন টানা দুই অলিম্পিক টেনিসের এককের সোনা। একইদিন ১১২ বছর পর অলিম্পিকে ফেরা গলফের সোনা জিতেন যুক্তরাজ্যেও আরেক তারকা জাস্টিন রোজ।
    সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত পদকজয়ী তালিকায় প্রথম তিনজনই যুক্তরাষ্টের মাইকেল ফেলপস, কেটি লেডিকি ও সিমোন বাইলস।
    ৪০০ মিটার দৌড়ে মাইকেল জনসনের ১৭ বছরের পুরনো রেকর্ড ভেঙ্গেছেন দক্ষিন আফ্রিকার ওয়েড ফন নিকার্ক।
    অলিম্পিকে ২৮ বছর পর মেয়েদের স্প্রিন্টে ১০০ ও ২০০ মিটারের সোনা জিতেছেন জ্যামাইকার এলাইন থম্পসন।
    রাশিয়ার ১১৮ এ্যাথলেটকে ডোপিং অভিযোগে নিষিদ্ধ করে আইওসি।
    টেনিস তারকা নোভা জোকোভিচকে প্রথম রাউন্ডে হারিয়ে ২০১৬ অলিম্পিকে আলোচনায় আসেন আর্জেন্টিনার হুয়ান দেল পোত্রো।
    র্ওি ২০১৬ প্রথম দূর্ঘটনা ঘটে ভল্টে প্রতিযোগিতায়, জিমন্যাস্ট সামির আইতের দুটি পা ভেঙ্গে ঝুলছিল। যা দেখে অনেক ক্রীড়াবিদ ভয় পেয়ে যান।

৩২তম অলিম্পিক
৩২তম অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হবে ২০২০ সালে টোকিও জাপান। এর আগে ১৯৬৪ সালে টোকিওতে ১৮তম অলিম্পিক ক্রীড়ানুষ্ঠান সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়। ২০২০ সালে টোকিও অলিম্পিকে সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারী দেশ হলো ২০৬টি, মোট খোলা ৩৪টি, ৪৭টি বিভাগে ৩২৪টি ইভেন্ট। খেলার স্থিতিকাল হবে (২৪ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট)। ২০১৬ অলিম্পিক থেকে ০৬টি খেলা বেশি দেখা যাবে টোকিও অলিম্পিকে। সম্ভাব্য খেলাগুলো হলো কারাতে, বেইসবল, স্কেটবোর্ডি, সফটবল, স্পোর্টস স্ক্লাইম্বিং, সার্ফিং।

পুরুষের সাথে নারীরাও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে প্রায় সমানে সমানে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই প্রয়োজন লেখাপড়াসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দেশি-বিদেশি প্রতিযোগিতায় নারী-পুরুষ সমতা রক্ষা করা। রিও অলিম্পিকসহ সব প্রতিযোগিতায় তা এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা ২০২০ সালে টোকিও অলিম্পিকে হয়তোবা দেখবো মহিলা ক্রীড়াবিদরা আরো বেশি এগিয়ে গেছে। তাই আমাদের জাতীয় ও বিদ্রোহী কবি যথার্থই বলেছেন 'বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণ কর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর'।

“সমাপ্ত”

BBS, BPEd, MBA(NU)
rajibbinsufiyan@gamil.com

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

খেলাধুলায় ওয়ার্ম আপের(Warm Up) ভুমিকা

শিশুর মানসিক বিকাশে খেলাধুলার গুরুত্ব